রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

রূপকথার রূপকল্প


আমাদের বাংলা রূপকথার গল্পগুলো প্রজন্মের পরে প্রজন্ম ধরে অপরিবর্তিত আছে। আমাদের বাব-মা, তাদের বাবা-মা, হয়তো বা তাদেরও বাবা-মা শুনে এসেছেন, পড়ে এসেছেন এইসমস্ত আবহমান রূপকথাগুলো। কুঁচবরণ কন্যার মেঘবরণ কেশ, সোনার কাঠি রূপোর কাঠি, ডালিমকুমার, অরূণ বরূণ কিরণমালা, সুখু-দুখু এমন আরো বেশ অনেকগুলোই। বাংলা ভাষাভাষীদের বাইরেও বাংলায় বেশ কিছু রূপকথা আছে আদিবাসীদের। মোটাদাগে প্রায় তিনরকম রূপকথা পাওয়া যায়, আমি গল্পের ধরণ ভেদে ভাগ করছি:

১) রাজকুমার, রাক্ষস, ডাইনি, রাজকন্যা
২) রাজপুত্র, রাজকন্যা, দু:খ, হাহাকার, আনন্দ
৩) অন্তর্নিহিত অর্থবাচক

আর এই রূপকথার গল্পের কিছু কমন ফ্যাক্টর হচ্ছে, রাজ্য, রাজকুমার, রাজকন্যা, রাক্ষস, খোক্কস, ডাইনি, পঙখীরাজ, দৈত্য, ভুত, সুতানাগ, সুয়োরাণী, দুয়োরাণী, সন্ন্যাসী, জাদু। সমস্ত গল্পগুলোই এগুলোকে ভিত্তি করে আবর্তিত। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, বাংলায় রূপকথা সেই ১০০ বছর আগেই থেমে গ্যাছে। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীই সম্ভবত শেষ মৌলিক রূপকথা লিখেছেন, এর পরে আর কেউ ভাবেও নি রূপকথাকে সাহিত্যের একটা ধারা হিসেবে। ফলে আমাদের রূপকথার ধারাবাহিকতা ওখানে শুধু থমকেই যায় নি, একরকম হয়তো শেষই হয়ে গ্যাছে। আমাদের পরের প্রজন্ম কি আদৌ সন্তুষ্ট থাকবে বা সন্তুষ্ট থাকা আদৌ কি সম্ভব, সেই ১০০ বছর আগেকার ভাবনা সংশ্লিষ্ট রাক্ষস খোক্কস দৈত্য দানবে? এমনকি যেখানে আরো অনেএক পুরোনো পারস্যের আরব্য রজনী বা হাতিম তাই এর গল্প আমাদের বাংলা রূপকথা থেকে অনেক বেশি উত্তেজনাকর, অনেক বেশি ফ্লুইড, অনেক বেশি বিস্তৃত, সেখানে বাংলায় আমরা একদমই এগোতে পারিনি আমাদের রূপকথা নিয়ে। আমাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা কি এতই থমকে গ্যাছে যে সেই কোন হাজার বছর আগেকার রামায়ন/মহাভারতের পরে আমরা বিস্তৃত পটভূমি নিয়ে কোন রূপকথা লিখতেই পারিনি?

এত লম্বা ভুমিকা টানার উদ্দেশ্য আসলে বাংলা সাহিত্যকে ধাক্কা টাক্কা দেয়া নয়, আমার মত মানুষের ধাক্কায় বাংলা সাহিত্য একচুল নড়বেও না। কাজের সংজ্ঞা বলছে, বল প্রয়োগে বস্তুর অবস্থার পরিবর্তনই হচ্ছে কাজ, তা বাদে বাকি সবই অকাজ। আমি খামাখা অকাজে সময় নষ্ট করি না, তাই সাহিত্যে কোন বল প্রয়োগ করার বিন্দুমাত্র শখ আমার নেই। তাই আসল কথায় আসি। আমাদের গদ্যসাহিত্য মোটামুটি ইংরেজী গদ্য সাহিত্যকেই অনুসরণ করে চলে। ইংরেজী গদ্যের প্রায় সব শাখাকেই আমরা বাংলা সাহিত্যে স্থান দিয়েছি, শুধু সযতনে একটা শাখাকে এড়িয়ে গেছি, Fantasy Fiction, রূপকল্প। অনেকেই ফ্যান্টাসি ফিকশন পড়ে থাকেন, কিন্তু একই সাথে অনেকেরই হয়তো ধারণাও নেই ফ্যান্টাসি ফিকশন এখন সম্ভবত ইংরেজী সাহিত্যের সবথেকে জনপ্রিয় শাখা। ফ্যান্টাসি বলতে আমি শিশুতোষ হ্যারি পটারকে বোঝাচ্ছি না। হ্যারি পটার সিনেমা তৈরী শুরু না হলে হয়তোবা এত জনপ্রিয় হতোও না।, আমি ফ্যান্টাসি ফিকশনের সবথেকে জনপ্রিয় ধারা নিয়ে আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই শুধু। ধারাটার নাম হচ্ছে Epic Fantasy।

 আসলে বাংলাকে খুব একটা দোষ দিয়ে লাভ নেই।  ইংরেজী সাহিত্যও এপিক ফ্যান্টাসিকে তেমন সুনজরে দেখতোনা। কেনই বা দেখতে যাবে,  ইউরোপের বিভিন্ন এলাকার পৌরণিক গল্প আছে, ইংরেজীতে সেগুলো অনুবাদ করেই তো চলছিলো। আমাদের রাক্ষস খোক্কসের বিকল্প ছিলো ওদের, সেগুলো নিয়েও সুখে শান্তিতে ছিলো। হালকা চালে একটা দুটো ফ্যান্টাসি উপন্যাস, কিছু ছোটদের, কিছু বড়দের। কেউ লিখছে ড্রাগন আর নাইট নিয়ে, কেউ লিখছে ম্যাজিক নিয়ে, কেউ লিখছে মিথিকাল ক্রিয়েচার নিয়ে। কিন্তু, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে পরে দিয়ে ফ্যান্টাসি ফিকশন ঘরানায় কিছু পরিবর্তন আসছিলো। হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের আফ্রিকাকেন্দ্রিক ফ্যান্টাসিগুলো ফ্যান্টাসি উপন্যাসের ধারা পালটে দিচ্ছিলো।যদিও সবাই সেভাবে হ্যাগার্ডকে গ্রহণ করেনি তখনো, বিশেষ করে নাক উঁচু ইংলিশরা। The Inklings নামে উঠতি লেখকদের একটা গ্রুপ তৈরী হয় এই ১৯৩০ এর দিকে,  যারা হ্যাগার্ডের ন্যারেটিভ এবং ফ্যান্টাসির অভিনবত্বকে নিজেদের জন্যে অনুকরণীয় বলে ধরে নেয় এবং এধরণের ন্যারেটিভ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালানো শুরু করে। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, ফ্যান্টাসি ফিকশনকে পুরো এক ধাপ এগিয়ে নিতে হবে। প্রথম প্রোজেক্ট শুরু করেন C. S. Lewis, তাঁর The Chronicles of Narnia সিরিজ দিয়ে। দু:সাহস কিছুটা কম ছিলো, তাই ন্যারেটিভ আর পটভুমির ব্যাপকতা সত্বেও প্রচলিত ঘরানা থেকে খুব একটা বেরোতে পারেন নি ভদ্রলোক, এবং তাঁর সিরিজটাও একরকম বলা যায় শিশুতোষ। কিন্তু এর পরপরই ফ্যান্টাসি ফিকশনের সমস্ত ধ্যান ধারণা পালটে দিলেন J. R. R. Tolkien। সমস্ত মিথ, সমস্ত লিজেন্ড তিনি একাকার করে দিলেন, শুধু তাই না, প্রচলিত ধারা ভেঙে অলটারনেটিভ রিয়েলিটি নিয়ে এলেন তিনি। লিখলেন The Lord of the Rings, তৈরী হলো সম্পূর্ণ নতুন একটা শাখা Epic Fantasy।  সাহিত্য জগতে তোলপাড় হয়ে গেলো, ফ্যান্টাসি ফিকশনের মাইলফলক গেঁথে দিলেন তিনি। এতটাই ব্যপকত্ব তাঁ্র এই সিরিজের,  এমনকি অধুনা George R. R. Martin পর্যন্ত Tolkien'এর ছায়া থেকে বেরোতে পারেন নি A Song of Fire & Ice (HBO তে Game of Thrones নামে ড্রামা সিরিয়াল এই এপিক ফ্যান্টাসি সিরিজের আলেখ্যেই তৈরী) সিরিজটার মত ডার্ক এবং প্রায় ইউনিক একটা প্লট নিয়ে। Tolkien ফ্যান্টাসি সমস্ত কল্পনাকে এক সুতোয় গেঁথে দিয়েছেন,   Warrior, Prince, Elf, Dwarf, Troll, Ogre, Orc, Goblin, Wizard, Wraith, Sentinel, Dragon, Giant,  Giant Bird, Magic Sword, Magic Stone, Magic Song, Magic Talisman, Healer, Assassin, Dark Power; মোটামুটি এগুলোই একটা এপিক ফ্যান্টাসির মূল উপাদান, রেয়ার দুই একজন এর বাইরে কিছু ভাবতে পেরেছেন। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, Tolkienই যদি সব করে ফেললেন, তাহলে বাকিরা এতদিন ধরে বসে কি করছেন, চর্বিত চর্বন হচ্ছে তো, তাই না? না, উনি শুধু পথ দেখিয়েছন, সবকিছু এক জায়গায় জড়ো করে দেখিয়েছেন, কিভাবে ধারাটা এগিয়ে নিতে হবে।  পরের ধাপে আমি দেখাচ্ছি, বিভিন্ন লেখক এই এলিমেন্টগুলো নিয়েই কিভাবে নিজেদের মত অসাধারণ কিছু এপিক সিরিজ লিখেছেন (অবশ্যই আমার সীমিত অভিজ্ঞতার আলোকে)।

★প্রথমেই আসি Robert Jorden এর Wheel of Time প্রসঙ্গে। ভালো এপিক ফ্যান্টাসির একটা সমস্যা হচ্ছে শুরুটা খুব স্লো এবং বোরিং হয়, হাতে গোনা দুই একটা এর ব্যতিক্রম। এখন একটা বই যখন ৪০০+ পাতার হয়, আর সিরিজ যদি অন্তত ৩ পর্ব ধরে চলে বোরিং স্টার্টিং তো হতেই পারে। রবার্ট জর্ডান এই বোর হবার ব্যাপারটাকেও শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছিলেন। হুইল অফ টাইম সিরিজের ১৪ টা বই, ১০০০০+ পাতা সব মিলে, অন্তত কয়েকশ রেগুলার চরিত্র, প্লটের ভয়াবহতা ভেবে দেখুন। আমি অন্তত দুবার সিরিজ থামিয়ে দিয়েছিলাম, ক্লান্ত হয়ে।  কমন প্লট গল্পের, গ্রামের সাধারণ ছেলে, ম্যাজিক সোর্ড, ডার্ক লর্ড, ম্যাজিক, এপিক জার্নি, এসব নিয়েই। কাহিনী বিস্তৃত করতে করতে ভদ্রলোক সম্ভবত ৫/৬ টা বইএর পরে খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন, কারণ এর পরের ৩/৪ টে বই প্রায় একই জায়গায় পাক খেয়েছে, প্রায় একই রকম প্লট এই ৩/৪ টে বই এর,ল। শেষ ৪ টে বই তে আবার গল্পের রাশ টেনে ধরেছেন। এই সিরিজের মত বিস্তৃত করে অলটারনেট পৃথিবীর বর্ণনা বা চরিত্রগুলোর এপিক চরিত্র হয়ে বেড়ে ওঠা, এমনটা খুব কম পাওয়া যায়। আর ১০০০০+ পাতা বই লেখার সাহসও খুব কম মানুষের আছে।  সিরিজটার আরেকটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যদিও মূল প্রোটাগনিস্ট তিনজন পুরুষ, বাকি প্রধাণ সমস্ত চরিত্রই নারী। নারী চরিত্রগুলোর দৃড়তা, তাদের স্ট্রেন্থ, পার্সোনালিটি, পাওয়ার, এভাবে আর কোন সিরিজে আমি দেখিনি। এমন কিছুই না হুইল অফ টাইম, কিন্তু কাহিনী বিস্তারের জন্যেই অনন্য এক স্থানে থাকবে সিরিজটা। হিন্দু, বৌদ্ধ, তাও, ক্রিশ্চিয়ান ফিলোসফির খানিকটা ছোঁয়া আছে গল্পে। আছে আরব বেদুইন, ফিউডাল জাপান, রেড ইন্ডিয়ান, ১৯৮৪ সালে লেখা শুরু করেন, ২০০৭ এ যখন মারা যান, তখন সিরিজের শেষ বইটা ধরেছেন সবে। বই শেষ না করেই মারা যাওয়ায়, জর্ডানের স্ত্রী এবং এডিটর Harriet অনেক ভেবে চিন্তে এই সিরিজের ডাই হার্ড ফ্যান আরেকজন ফ্যান্টাসি লেখক Brandon Sandarson'কে নিযুক্ত করেন বইটা শেষ করার কাজে, শেষ হবার পরে দেখা যায়, খুব বেশি বড় হয়ে গ্যাছে, গুরুর চাইতেও এককাঠি বাড়া শিষ্য। বইটাকে তখন ৩ ধাপে পাবলিশ করা হয়, ফাইনালি ১৯ বছর পরে ২০১৩ তে শেষ হয় সিরিজ। যদি অসম্ভব ধৈর্য্য এবং অফুরন্ত সময় থাকে হাতে, সিরিজটা পড়া শুরু করা যেতেই পারে।

★খুব সম্ভবত এই সিরিজটা শেষ করার সময়ই Brandon Sanderson তার নিজের লেখার জন্য একটা প্লট ভাবছিলেন, যার ফলস্রুতিতেই ২০১৪ তে দখা গেলো প্রায় ইউনিক প্লট সেটিংস নিয়ে হাজির ভদ্রলোক। ম্যাজিক সোর্ড এবং ডার্ক পাওয়ার, এটুকুই শুধু কমন বাকি ফ্যান্টাসিগুলোর সাথে। The Stormlight Archive, পুরোপুরি ইউনিক তার প্লট সেটিং, ক্যারেকটার বিল্ড আপ,   অলটারনেট রিয়েলিটি বা পাতার সংখ্যার দিক দিয়েও। এপর্যন্ত দুটো পর্ব এসেছে, দুটোই ১০০০+ পাতা, তৃতীয় পর্বে শেষ হবে বলে ধারণা করছি, কারণ আমি চতুর্থ পর্বে যাওয়ার মত ম্যাটেরিয়াল ভাবতে পারছি না। এখানে পৃথবী একেবারেই আলাদা, সূর্য্য একটা হলেও, চাঁদ তিনটে। কন্টিনিউয়াস, হাইস্টর্ম বয়ে যায় বলে, মানুষ ছাড়া বাকি সব জীবই খোলসওলা,  অর্থ্রোপোডা বা স্কেলড শরীর। গাছপালা নড়াচড়া করতে পারে, এবং হাইস্টর্মের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকে মুড়ে ফেলতে পারে। সবথেকে বড় কথা এই সিরিজের একটা গোছানো প্লট আছে, এন্টিসিপেট করা যায় কিসের পরে কি হতে পারে, একঘেয়ে বয়ে চলা নয়।

★Jim Butcher এর Codex Alera সিরিজটা মিলিটারি, ম্যাজিক, এন্ড অফ ওয়ার্ল্ড এই তিন ঘরাণার মিশ্রণ। অনেকটা রোমান এম্পায়ার ধাঁচে সাজানো প্লট, মাইট এন্ড  ম্যাজিক দুই এর কম্বিনেশন। ৬ টা পর্বে ধাপে ধাপে বেড়ে উঠেছে গল্পের এন্টাগোনিস্ট, আছে কিছু মিথিকাল ক্রিয়েচার। তবে রোমান ধাঁচটাই এই সিরিজের মূল বৈশিষ্ট্য। বুচারকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিলো, চুড়ান্ত এবসার্ড এলিমেন্টাল কম্বিনেশন থেকে ফ্যান্টাসি গল্প লিখতে পারবেন না। বুচার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন, তখন তাঁকে এলিমেন্ট ধরিয়ে দেয়া হয়, Lost Roman legion এবং Pokemon। ভদ্রলোক ভালোই করেছেন বলে আমার মনে হয়েছে। একটা ভালো প্লট, ভালো গাঁথুনি, এলিমেন্টাল এবসার্ডিটিকেও দিব্যি মিলিয়ে দিয়েছেন। ম্যাজিকাল ট্যালেন্টবিহীন কিশোর এন্টাগোনিস্টের শুধুমাত্র নিজের উইটের বলে একের পরে এক বাধা পার হয়ে, শেষ পর্যন্ত ম্যাজিক খুঁজে পাওয়া এবং হ্যাপি এন্ডিং, মোটের উপরে খারাপ না।

★Thomas Harlan, জার্মান রাইটার হলেও,  ওর Oath of Empire সিরিজটা ইংলিশ ফ্যান্টাসির মধ্যে আনছি অনন্য এক কারণে। ভদ্রলোক অলটারনেট রিয়েলিটি তৈরী করেন নি  অলটারনেট সিচুয়েশন তৈরী রী করেছেন, আমাদের খুব পরিচিত সেনারিও থেকে। পারস্য এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের মধ্যে লড়াই চলছে, রোম থেকে তৎকালীন সিজার ভাবছে, রোমান বাইজেন্টাইন সম্মিলিত শক্তি নিয়ে লড়াই পারস্যের একদম সেন্টারে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু পারস্যের ম্যাজিকাল শক্তি তো অনেক বেশি তাই মাইনর স্যাক্রিফাইস চাই। নাবাতিয়া আর প্যালমিরা কে স্কেপগোট করে পারস্যের ডার্ক ম্যাজিককে ওখানে ফোকাস করাতে পারলেই নিরাপদে অন্য পথ ধরে এগিয়ে পারস্যের একদম ভিতরে ঢুকে যাওয়া যাবে নিরাপদে। আর ম্যাজিকাল পাওয়ার যদি না থাকে, মিলিটারি পাওয়ারে রোমানদের কাছে পারস্য কিছুই না। পারস্যের ডার্কেস্ট ম্যাজিশিয়ান যখন প্যালমিরার উপরে তান্ডব চালাচ্ছে, শ্রেফ কর্তব্যের খাতিরে সেখানে আটকা পড়ে গেছিলো আরব বেদুইন ব্যাবসায়ীদের নেতা মুহাম্মদ। ডার্ক ম্যাজিক দেখে ফাইনালি তার বোধ হলো, এর হাতে পৃথিবী শেষ হয়ে যাবে, এর কাউন্টার ম্যাজিক চাই, আরবে ফিরে সে সন্ধানে নেমে পড়লো ম্যাজিক অফ লাইটের, এহেন একদিন গুহায় বসে ধ্যানের সময়, তীব্র আলোর ঝলকানি, আওয়াজ এলো, "পড়, পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন............."। রোমানদের দখানো পথেই মোহাম্মদ নেমে পড়লো ধখল এবং সাম্রাজ্য বিস্তার করে শক্তি বৃদ্ধিতে, ডার্ক ম্যাজিকের মোকাবিলা করতেই হবে।
সচরাচর এমন অলটারনেট হিস্ট্রি, অল্টারনেট সিচুয়েশন নিয়ে এমন বিস্তারে লেখা হয় না, ওথ অফ এম্পায়ার সিরিজটা সেদিক দিয়ে খানিকটা ইউনিক তো বটেই। মুহাম্মদের অলটারনেট হিস্ট্রি উপভোগ্যও

★Steven Ericson এর Malazan Book of the Fallen সম্ভবত সবথেকে কমপ্লেক্স হাই ফ্যান্টাসি গল্প। আমি দুইবার চেষ্টা করেও ধাক্কা খেয়ে বন্ধ করেছি এই সিরিজটা। কি বিশাল বিস্তৃত প্লট, ম্যাজিক, পাওয়ার, মিথিকাল ক্রিয়েচার, রিয়েলিটি, আর কি অসম্ভব জটিল ঘটনাবিন্যাস কিছুক্ষন পরপর খেই হারিয়ে ফেলতে হয়। এত ধরণের এলিমেন্ট আর ক্রিয়েচার, মনে রাখতে গেলে গল্প ভুলে যেতে হয়, গল্প মনে রাখতে গেলে এলিমেন্ট ভুলে যেতে হয়। কোন সিরিজের সাথে সামান্য একটুও মিল নেই। এই সিরিজের কোন ক্রোনোলজিকাল অর্ডার নেই, একটা গল্প শুরু হয়ে সেটার সাবপ্লট নিয়েই আরেকটা সিরিজ,  ফের যখন গল্পে ফিরলো, দেখা গেলো আগের চরিত্রগুলোর কোন অস্তিত্বই নেই, সম্পূর্ণ ভিন্ন এলাকায় ভিন্ন চরিত্র নিয়ে কথা হচ্ছে। সিরিজের প্রপথম ৫ টা বই, একটার সাথে আরেকটার কোন স্টোরিলাইন কানেকশন নেই। ৬ নম্বর বইতে গিয়ে সব এক হয়ে একক গতিতে এগিয়েছে। আমার গোটা পাঠক জীবনে এত কমপ্লেক্স কোন চ্যালেঞ্জের মুখে আমি পড়িনি। তারপরেও প্লটের ইউনিকনেসের জন্য এটাকে অনেকের থেকেই এগিয়ে রাখবো

এছাড়াও, Kingliller Chronicles, Chronicles of Amber, Memoy-Sorrow-Thorn, Death Gate Cycle, The First Law, Farseer,  Daggar and Coin, Shannara Chronicles, Chronicles Of Thomas Covenant, Death Gate Cycle, Earthsea Cycle,  Aegis of the Gods, Demon Cycle সহ এমন যেকটা সিরিজ পড়েছি  সবাইকেই দেখেছি নিজেদের সর্বোচ্চ ইমাজিনেশন দিয়ে চেষ্টা করতে, কি করে কিছু ইউনিক প্লট, ইউনিক রিয়েলিটি, ইউনিক ম্যাজিক সেট, ইউনিক ক্রিয়েচার ব্যবহার করে এপিক ফ্যান্টাসিকে এপিক করে তুলতে। রূপকথা আজ আর শুধুই জাদুর তলোয়ার নিয়ে দুষ্টের দমনের মত সাদা কালোয় আটকে নেই, প্রচুর গ্রে এরিয়া আছে।  রূপকথার নারী চরিত্রগুলো আজ শুধুই  Damsel in Distress নয়, তারাও Radient Knight। রুপকথা শুধুই বাচ্চাদের জন্যে নয়, সেক্স আর তুমুল ভায়োলেন্স মেশানো, বড়দের জিনিস। সময় যাদের হাতে আছে, শুরু করে দেখুন একটা এপিক ফ্যান্টাসি, নেশায় পড়ে যাবেন, গ্যারান্টেড।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন